আহসান হাবীব জুলকারনাইনের সাক্ষাৎকার - গ্রহীতা: সাম্য রাইয়ান

আহসান হাবীব জুলকারনাইনের সাক্ষাৎকার - গ্রহীতা: সাম্য রাইয়ান


[কুড়িগ্রামের একমাত্র গল্পপ্রধান পত্রিকা ‘শব্দপরিব্রাজক’ এর সম্পাদক জুলকারনাইন স্বপন একজন কবি, গল্পকার, নাট্যকার, নির্দেশক ও সংগঠক। সমাজ বাস্তবতার নিরিখে তৃণমূল মানুষের জীবনচিত্র সুন্দর, সাবলীল এবং বাস্তব রূপে ফুটে ওঠে তার সাহিত্যে। জীবন সংগ্রামে লিপ্ত সাধারণ মানুষের কথাই তাঁর লেখার অনুষঙ্গ। গল্পগ্রন্থ ‘অতলে জীবন’ ২০১৩ সালে প্রকাশের পরই বোদ্ধা পাঠকদের নজরে আসেন তিনি। 


২০১৫-র ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়ায় লিখিত পদ্ধতিতে এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখ চারবাক অনলাইনে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। এখানে হুবহু পুনঃপ্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকারটি ‘তীব্র কুড়িগ্রাম’-এ প্রকাশের অনুমতি দেয়ায় সাম্য রাইয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। -সম্পাদক]


সাম্য রাইয়ান: সাহিত্যচর্চার ভাবনাটি আপনাকে কবে প্রথম আক্রান্ত করে? মানে শুরুর দিকের বিষয়টা জানতে চাচ্ছি; বিশেষত সিরিয়াসলি লেখালিখির শুরু হয় কবে এবং কীভাবে?


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: সাহিত্যচর্চার ভাবনাটি কবে প্রথম আক্রান্ত করেছিলো তার দিনক্ষণ আসলে মনে নাই। তবে এটি বলতে পারি যে, ১৯৮০ সালের শেষের দিকে কাগজে-কলমে লেখালেখি শুরু করি। আর সিরিয়াসলি লিখতে শুরু করি অনেক পরে অর্থাৎ ততদিনে চোখের জ্যোতি কমে এসেছে। দু’-চারটা চুল পাকতে শুরু করেছে। চাকুরীর কারণে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার ফলে অভিজ্ঞতার ঝুলিও যখন একটু একটু বাড়তে শুরু করেছে। কীভাবে সিরিয়াসলি লেখার শুরু হয়েছে, তা বলতে পারবো না। কিন্তু যেহেতু একটি লেখকসত্ত্বা ভেতরে কাজ করত এবং লেখা ও পড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল, ফলে একটু একটু লিখতে লিখতে সিরিয়াসলি লেখা শুরু করি।


সাম্য রাইয়ান: আপনি তো লেখালিখির শুরুর দিকে কবিতা লিখতেন। গল্পের দিকে ঝুঁকলেন কীভাবে, কেন?


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: হ্যাঁ, আমি শুরুর দিকে কবিতা লিখতাম এবং এখনও লিখি। তবে আমি যে বিষয় নিয়ে ভাবতাম তা প্রকাশের ক্ষেত্রে কবিতার চেয়ে গল্পকেই শ্রেয় মনে হয়েছে এবং গল্পতেই আমি তা সহজভাবে করতে পারি।


সাম্য রাইয়ান: লেখার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরণের চিন্তাকে প্রাধান্য দেন? কোনো বিশেষ ধরণের চিন্তা আপনার মাথায় থাকে কি? দর্শন?


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: লেখার ক্ষেত্রে আমি গ্রামীণ পটভূমি এবং তাদের জীবনযুদ্ধকেই বেশি প্রাধান্য দেই। যেহেতু আমার দেশের বেশিরভাগ অংশই গ্রাম এবং সেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই যুদ্ধ প্রতিদিনের বাঁচার জন্য।


সাম্য রাইয়ান: সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আপনার কোনো প্রেরণার জায়গা আছে কি?


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমার প্রেরণার জায়গা আছে। ছাত্র অবস্থায় যখন গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করি এবং সমতার স্বপ্ন দেখার রাজনীতি করি, সেই জায়গাটিই আসলে আমার প্রেরণার উৎস।


সাম্য রাইয়ান: লেখালিখির এতো বছর পেরিয়ে আপনার একটি মাত্র গল্পের বই (অতলে জীবন); প্রকাশিত হয়েছে গতবছর। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এই দীর্ঘ সময় নেয়ার কারণ কী? 


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: আসলে প্রথম দিকে লেখালেখি করেছি একটি তাড়না থেকে। ফলে সেটি প্রকাশিত হলো কি না সে বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিলো না। কিন্তু এক সময়ে এসে মনে হলো, আমি মানুষ হিসেবে অনেকটা সময় এর পেছনে ব্যায় করেছি। এ সময়ের মধ্যে আমার ভাবনা এবং চর্চা, সেটি কতটুকু মানুষের কাজে আসবে জানি না, তবে তা প্রকাশ করা উচিত। তাই এতো বছর পর প্রথম বই ‘অতলে জীবন’।


সাম্য রাইয়ান: বই প্রকাশ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাচ্ছি...


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: ভবিষ্যতে অবশ্যই বই করবো, সেজন্য লেখালেখিও করছি। আর হুটহাট করে বই প্রকাশের পক্ষপাতী আমি নই। কারণ একটি লেখা শেষ করলেও শেষ হয় না। বারবার নাড়াচাড়া করে দেখতে হয়। তারপর সেটি ফাইনাল করা হয়। যার জন্য অনেক সময় প্রয়োজন।


সাম্য রাইয়ান: অতলে জীবনের পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন?


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: অতলে জীবনের পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই গল্পগুলোকে নির্বাচন করেছি, যে গল্পগুলোতে নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জীবনের কথা আছে, যুদ্ধের কথা আছে, করুণ পরিণতির কথা আছে। আর সেটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারণে হোক বা রাজনীতির কারণেই হোক; মোদ্দা কথা- তারা নিপীড়নের শিকার।


সাম্য রাইয়ান: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কী?


আহসান হাবীব জুলকারনাইন: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা সম্পর্কে আমার একটা নেতিবাচক মনোভাব আছে। যদিওবা আমি খুব বড় গল্পকার নই, কিন্তু নিজেকে আমি একজন বিদগ্ধ পাঠক মনে করি। বাংলাদেশে ইদানীং বেশিরভাগ গল্পেই সিরিয়াসনেস লক্ষ্য করা যায় না। কাজগুলো দেখে মনে হয় দায়সারা গোছের। সেটা বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিংবা গল্প করার ক্ষেত্রে। গল্পগুলোতে পরিশ্রমের ছাপ খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু তারপরও যে ভালো গল্প হচ্ছে না এটা বলা যাবে না। ভালো গল্পও হচ্ছে, কিন্তু তার পরিমাণ অনেক কম। সবচেয়ে দুঃখজনক যে বিষয়টা ভাবায় তা হলো যেন-তেন কাজ করলেও তার কোনো জবাবদিহিতা নাই এবং বই প্রকাশের ক্ষেত্রে ন্যুনতম লজ্জাবোধ কাজ করে না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্য করার আগে আর একবার চিন্তা করুন, যা বলতে চান তা যথার্থ কি?