শুভ্র সরখেলের সাক্ষাৎকার

শুভ্র সরখেলের সাক্ষাৎকার


প্রশ্ন: কেমন আছেন? 


শুভ্র সরখেল: রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে কারো চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সবার চোখে এক অদ্ভুত অস্থিরতা। আমি তাদের মধ্যে একজন। স্থির হওয়ার চেষ্টায় আছি! 


প্রশ্ন: আপনার জন্ম কুড়িগ্রামে, এটা ভাবলে আমাদের ভালো লাগে, গর্ব হয়। আপনি কুড়িগ্রামকে কীভাবে অনুভব করেন? 


শুভ্র সরখেল: ভালো লাগা পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু গর্ব করার মতো কিছু করিনি এখনো। আর কুড়িগ্রামকে অনুভবের ব্যাপারে যদি বলি, তাহলে প্রথমে ক্ষোভ আসে, তারপর প্রেম। অভিমান ছিল, কিন্তু এখন আর হয় না। তবে বন্ধু মহলের আড্ডাগুলো বেশ মিস করি। 


প্রশ্ন: আপনি পড়ালেখা করেছেন কোথায়? ছাত্রজীবন কেমন উপভোগ করেছিলেন? 


শুভ্র সরখেল: আমার একাডেমিক হিস্ট্রি খুব বাজে। কাউকে বলতে ভালো লাগে না। কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ২০১৪ সালে কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করি। সর্বশেষ বি এস সি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ঢাকায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভারসিটিতে দুইটি সেমিস্টার পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়েছিলো। একদিন মাসিক বেতন না দেওয়ার কারণে পরীক্ষায় বসতে পারি নি। ওইদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, আর পড়াশুনা করবো না। টাকার জন্য পড়তে পারবো না? এ কেমন কথা!


প্রশ্ন: লেখালেখির ব্যাপারটা আপনার পরিবার কীভাবে গ্রহণ করেছিলো?


শুভ্র সরখেল: নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য নিজের অজান্তেই তাদের গলায় ছুড়ি চালিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। আমি নিজেও গলা কাটা সেই সব সন্তানদলের একজন। এই উপমহাদেশের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার না হলেও অন্তত দালালি করতেও বাধা দেন না, যতসব আপত্তি এই লেখালেখি নিয়ে। 


প্রশ্ন: আপনি অনেক বছর ধরে কবিতা লিখছেন, কিন্তু প্রকাশিত বই মাত্র একটি। এর কারণ কী?


শুভ্র সরখেল: কবিতা আর আগের মতো নিয়মিত লিখছি না। আর গল্প বা উপন্যাসের বই বের করার মতো আগ্রহ নেই। 


প্রশ্ন: প্রথম দিকে যখন লেখালিখি শুরু করেছিলেন তখন কাদের সহযোগিতা পেয়েছিলেন? 


শুভ্র সরখেল: মাইকেল রবিন সরকার, সাজেদুল ইসলাম (সাজু ভাই), রাশেদুন্নবী সবুজ ভাই, তারিফ, মোকলেছ ভাই, শিলু ভাইসহ আরও অনেকে ছিলেন, যাদের সাথে আমার সখ্য ছিল। সাজু ভাইয়ের কাছ থেকে নিঃসন্দেহে অনেক কিছু পেয়েছি। লোকটার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে, এখনো। এরপর আরেকজনের সাথে পরিচয়ের কথাটা বিশেষভাবে বলতে হয়। বিন্দু’র সম্পাদক সাম্য রাইয়ান। 


প্রশ্ন: কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আপনি কোনো বিশেষ দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত? 


শুভ্র সরখেল: একদমই না। 


প্রশ্ন: কবিতা ছাড়াও আপনি বর্তমানে টিভি নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখছেন। ভবিষ্যতে আর কিছু লেখার পরিকল্পনা আছে কি?


শুভ্র সরখেল: বাংলাদেশ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির একটি উপাখ্যান লিখবো, হয়তো! 


প্রশ্ন: এত বছরে দেখা গেছে, আপনার লেখা নির্দিষ্ট দুই-একটি লিটলম্যাগে প্রকাশ করেন আপনি। এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?


শুভ্র সরখেল: বিন্দু ছাড়া আমি কোন লিটল ম্যাগাজিনের সাথে সম্পৃক্ত নই। অন্য কাউকে লেখা দিতে ভালো লাগে না। তাছাড়া স্ক্রিপ্ট নিয়ে ব্যাস্ত থাকি। আর আমার পরিচিত মানুষের সংখ্যাটাও নেহাতই স্বল্প। 


প্রশ্ন: কুড়িগ্রামের লেখক, লেখালেখি, সাহিত্যের পরিবেশ সম্পর্কে কিছু বলুন।


শুভ্র সরখেল: কুড়িগ্রাম একটি ছোট শহর। বড় শহর আর ছোট শহরের মধ্যে যেরকম তফাৎ থাকে, তেমনি লেখকদের মধ্যেও তফাৎ থাকে। এই তফাৎ কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন। একদিন কেটে যাবে আশা করি। আর সাহিত্য হচ্ছে একটি আদি দর্শন। জীবন যাপনের সাথে সাহিত্যের দিকও পরিবর্তন হয়। 


প্রশ্ন: কুড়িগ্রামের এখন যারা নবীণ লেখক, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।


শুভ্র সরখেল: এই সব্বোনাশ করেছেন দাদা! কী বলি? কিছু কি বলা যায়!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্য করার আগে আর একবার চিন্তা করুন, যা বলতে চান তা যথার্থ কি?