মাহফুজুর রহমান লিংকনের ‘প্রেমের কবিতা’: একটি চিরকালীন প্রেমের গল্প - সাম্য রাইয়ান

তীব্র কুড়িগ্রাম - মাহফুজুর রহমান লিংকনের ‘প্রেমের কবিতা’: একটি চিরকালীন প্রেমের গল্প - সাম্য রাইয়ান




“ত্বমসি মম ভূষণং        ত্বমসি মম জীবনং
          ত্বমসি মম ভবজলধিরত্মং।”

মধ্যযুগে জয়দেব লিখেছিলেন, গীতগোবিন্দে।

মানুষের প্রেমসাধনা বহুমুখী। মানুষ বেঁচে থাকে প্রেমের জন্য। কালে কালে প্রেমের নানারূপ আবিষ্কার করেছে মানুষ। যদিও গভীরে তার একই সুধা, তবু পরিপার্শ্ব ও উপলব্ধি কিছু বিন্দুতে আলাদা হয় ব্যক্তি/সময়-কালভেদে, ভিন্ন প্রতিবেশে। এই আলাদা ব্যাকরণই ফুটে উঠেছে আধুনিক ও উত্তর আধুনিক কালখণ্ডের কবিতায়।

মানুষ প্রেম করে, কবি প্রেমসাধনা করে; প্রেমের ভজনা করে। প্রেমের উপাসনা। এই বিন্দুতে আলাদা হয়ে যান কবি। প্রতিষ্ঠান থাকলে যেমন তার বিরোধীতা থাকে, রাষ্ট্র থাকলে তাতে দ্বন্দ্ব থাকে; তেমনি প্রেম থাকলে বিচ্ছেদও থাকে, একই মুদ্রার অপর পৃষ্ঠ হয়ে। আর তাই যত প্রেমের কবিতা, ততোই বিচ্ছেদের কবিতা লিখিত হয়েছে যুগে যুগে। হয়তো যতদিন পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, ততোদিন লিখবে প্রেমের কবিতা, সমান্তরালে বিচ্ছেদের কবিতা। জীবনের এক মুহূর্তের অনুভূতিতেও মূদ্রার অপর পিঠে আমরা পাই প্রেম কিংবা বিচ্ছেদ। কবি মাহফুজুর রহমান লিংকন ‘প্রেমের কবিতা’র প্রথম অনুচ্ছেদে যখন লিখেন, 

“যে দ্যাখায় দূরত্ব বাড়ে
সে দ্যাখা না-ই বা হলো আর”

তখন এই পংক্তিমালা শুধু ক্ষণিক দেখার অনুভূতিই বিবৃত করে না, বরং বিচ্ছেদ প্রবণ প্রেমের সামগ্রিকতাকেই ধারণ করে। এই প্রকাশ মৌলিক, চিরন্তন রঙের। পরের অনুচ্ছেদে কবি লিখেছেন,
“বহুদিন গত হলে
আঁচলের গহীন থেকে
রঙিন মুখখানা তুলেই যদি বলো
এভাবে দ্যাখা না হ'লেই ভালো...
সে দ্যাখা না-ই বা হলো!”

প্রথম অনুচ্ছেদে যে দার্শনিক অভিব্যক্তি প্রস্ফুটিত হয়েছে, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে পাওয়া যায় তার বিস্তৃতরূপ। যা পাঠকের চোখ থেকে কিঞ্চিত ধোঁয়াশা দূর করে। পাঠক স্তস্তি পায়, রহস্য উন্মোচনের পর গোয়েন্দার তৃপ্তি। এই কবিতার অন্তরে একটা গল্প আছে, গল্পটা পাঠকের মস্তিষ্কে গেঁথে নিতে হবে। অনেক কথা, অনেক চরিত্র যা আঁকা যেতে পারে এই কবিতার গল্পকে ভেবে। কিন্তু কবি এখানে মাত্র দুইটি চরিত্র উপস্থাপন করেই সামগ্রিক গল্পটা বলেছেন। আর মাত্র একটি চরিত্রের মুখে এক বাক্যের উক্তি! তাতেই পুরো গল্পের ছায়াজাল বিছিয়ে পাঠককে সূত্রমূখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কবি শুধু সূত্র ধরিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং অনেকগুলো নোকতা বিছিয়ে রেখেছেন, যার পদাঙ্ক মেনে পাঠকমননে তৈরি হতে পারে একটি চিরকালীন প্রেমের গল্প।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্য করার আগে আর একবার চিন্তা করুন, যা বলতে চান তা যথার্থ কি?