যার কবিতায় অমোঘ সত্য হাতছানি দেয় - নুসরাত জাহান

যার কবিতায় অমোঘ সত্য হাতছানি দেয় - নুসরাত জাহান



কবিতা, তিন বর্ণের ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ এর গভীরতা বিশাল। কবিতা হাসায়, কবিতা কাঁদায়, কবিতা আনন্দ দেয়, কবিতা বেদনা শেখায়। কবিতা যেমন ভালো লাগার বিষয়, তেমনি অনেক বেশি কঠিন বিষয় কবির ভাবের সঙ্গে ভাব মেলানো। এই ভাব মেলানোকে সহজলভ্য করতে হলে কবির কবিতায় ঢুকে পড়তে হবে। মগজে ধারণ করতে পারলেই কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় নিজের কথা। যাপিত জীবনের ক্ষুদ্র অনুষঙ্গগুলো শৈল্পিক ঢংয়ে, নানা বৈচিত্র্যতায় জায়গা করে নেয় কবির কবিতায়। সমৃদ্ধ করে সৃষ্টিকর্ম। এমনি বিচিত্র কিছু ভাবনায় ঋদ্ধ হয়েছে কবি মাহফুজুর রহমান লিংকনের অনন্য সৃষ্টি 'হাসপাতাল সিরিজ'

ঠুনকো জীবন নিয়ে অবিশ্বাসের দোলাচলে মন। কবিমানসে ধরা দেয় অনিশ্চয়তা। সুদীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ বৃহৎ পরিসর যখন ক্ষুদ্র জীবাণুর সামনে কাহিল প্রায়, তিনি লেখেন- 

"কিছুই নিরাপদ নয়, শুধু বিশ্বাস ছাড়া!
অবিরত ত্যাগ, কর্তব্যবিমূঢ় সময়, সামান্য চাওয়া;সত্য অনুভূত হতে হতে
অনেক সাহসী বয়স্য দিন জীবাণুর আক্রমণে পরাভূত!" (৭)

বাংলা সনেটের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন, "জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে।" মৃত্যু মানবজীবনের অমোঘ সত্য। এই সত্য যেন জীবন্ত হয়ে হাতছানি দেয় মাহফুজুর রহমানের হাসপাতাল সিরিজে। 

"এই পর্যন্ত খুব সামান্য করেন জ্বালাতন।
সকালে লেসিক্স ইনজেকশন, খানিক পরেই ইনসুলিন
কাছে গিয়ে শুনি ওরা আলোচনা করেন,
মৃত্যুর পর কবরটা যেন জানালার পাশে হয়!" (৮) 

ইনসুলিন আর ইনজেকশনে প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টার বিপরীতে কবরের স্থান নির্ণয়ের মাধ্যমে নিষ্প্রাণ দেহ নিয়েও মানুষের কত প্রত্যাশা! আবার কবিতায় আসে- 

"এখন একটি মৃত্যুর নিকটবর্তী অস্থির পুরো দিন,
সমস্ত চিন্তার নির্মাণ অসম্ভব কিন্তু কীভাবে
আর কোথায়, এবং নিজেকে যখন মৃত ভাবা যাবে
জীবনের চেয়ে তখনই ভালো হবে এই সময়।" (১০)

কবি লিখেন, 

"কোন ম্যাজিক নেই, ইচ্ছে পূরণ অন্যান্য ব্যক্তিদের মতোই
অলৌকিকতার কাজ এখানে নেই, আছে জীবন বিক্রির ঝুঁকি।"

হাসপাতালের সেই রুদ্ধশ্বাস পরিবেশেই অনুধাবন করা যায় একেকটি শ্বাস কত গুরুত্বপূর্ণ। কবিমস্তিষ্কে উঁকি দেয় বিক্ষিপ্ত ভাবনারা। কলমে ধরা দেয়- 

"মধ্যরাতে, লুকিয়ে রাখা পরমানন্দের একটি শ্বাস হাতছানি দেয়,
'তুই বাবা হোলে আমি ছেলে হতাম'।
যৌবনে আগুন চোখের বাবা এখন নদী নিয়ে চোখে
তাকিয়ে থাকেন; মেঘবর্ণ রাতে
ছেলেটি বিষণ্ণ বোধ করে।" (১৯)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্য করার আগে আর একবার চিন্তা করুন, যা বলতে চান তা যথার্থ কি?