শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক তপন কুমার রুদ্রকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিকথা | হেলাল জাহাঙ্গীর

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক তপন কুমার রুদ্রকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিকথা | হেলাল জাহাঙ্গীর


১৯৮০ সাল; এস এস সি পাশ করে সবেমাত্র কুড়িগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছি। কলেজ জীবনের স্বাধীনতা, স্মার্টনেস, ছেলে-মেয়েদের একসাথে ক্লাশ করবার মিষ্টি রোমান্টিকতা, হৃদয়ভরা আনন্দ আর উদ্দীপনা... তারুণ্যের শেষ ও যৌবনের সূচনাকাল।

ইংরেজি ক্লাস। অধ্যাপক তপন কুমার রুদ্র স্যার খুব প্রাঞ্জল ও প্রাণোচ্ছ্বল হৃদয়ের সৌরভ নিয়ে আমাদেরকে ইংরেজি শিক্ষা দিতেন। জিম ও ডেলার প্রেমকাহিনী। কাহিনীটি যারা পড়েছেন বা জানেন যে, কী অদ্ভূত সেই ঘটনাটি! স্যার চমৎকার উচ্চারণ ও উত্তম বর্ণনা বিশ্লেষণসহ হাসি মাখা মুখে আমাদেরকে বোঝাতেন তখন কখনো মনে হতো আহ্ আমি ঐ গল্পের নায়কের মত যদি হতে পারতাম! কলেজ জীবনের উদার, সাংস্কৃতিক পরিবেশই সম্ভবত মেধা উন্মেষের উপযুক্ত কাল।

আমি তখনও কবিতার ‘ক’-ও জানতাম না। স্যার কিন্তু নিবন্ধ প্রবন্ধ লিখতেন। উনি কবিতা চর্চাও করতেন। বিশেষ করে শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাই ওনার অধিক প্রিয় ছিলো। ওনার ছোটভাই শ্রী বাবলা দা'ও ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন।

কলেজে হাফ ফ্রিতে পড়ার জন্য আমি আবেদন করেছিলাম। আমাদের মেধা যাচাইয়ের জন্য মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো। স্যার ঐ বোর্ডের প্রধান ছিলেন। সংক্ষিপ্ত মৌখিক পরীক্ষা। স্যার আমাকে হাফ ফ্রিতে পড়ার ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এজন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম।

সাংস্কৃতিকভাবে অধ্যাপক তপন কুমার রুদ্র দীর্ঘসময় উদীচী কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন এবং উদীচীর সংগীত বিভাগ তখন কুড়িগ্রাম জেলায় সবার উর্দ্ধে ছিল। কারণ উদীচীতে তখন বাদল আহমেদ, নেজামুল হক বিলু, মানিক চৌধুরী, শেলুদা সহ অনেক সম্ভাবনাময় সাংস্কৃতিক প্রতিভা ছিলো।

স্যার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগেও জড়িত ছিলেন। স্যারের লেখা বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো খুব একটা বাজারজাত হতে পারেনি। কারণ কুড়িগ্রামে বই পড়ার লোকের সংখ্যা খুবই সীমিত। আর তার বইগুলোতে ছিলো উচ্চমানের মননশীল গবেষণা, জ্ঞান-বাস্তবতার বর্ণিল পরিচয়।

ঘটনাচক্রে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জ্বলে প্রেম! জ্বলে আজন্ম বিপ্লব!!’ বইটি বাংলা একাডেমির তৎকালীন উপ-পরিচালক এ কে এম জাকিউল হককে দিতে গিয়েছিলেম। উনিই আমাকে অধ্যাপক তপন কুমার রুদ্র স্যারের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন ও তার লেখার প্রশংসাও করলেন।

স্যার অধ্যাপক হিসেবে যেমন অহমহীন ছিলেন, লেখক হিসেবেও তিনি প্রচারবিমুখ ছিলেন। খুব সহজ-সরল ছিমছাম প্রকৃতির ব্যক্তিত্ব ছিলো তাঁর।

মাঝে মাঝে কুড়িগ্রাম পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ায় ব্যান্যার্জী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে দেখা হতো। আমি আদাব দিতাম; স্যার হাসিমুখে আদাব গ্রহণ করতেন। আমাদের পরিবারের খবর জানতে চাইতেন; আমার লেখা-লেখির খবর নিতেন। কখনও কখনও আমার কিংবা আমার সংগে যদি দু’-একজন থাকতো তাদের চা-সিংগারার বিলও দিয়ে দিতেন। এমনই সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিলো তাঁর স্বভাব।

(‘তীব্র কুড়িগ্রাম’ এর স্নেহাস্পদ সম্পাদক সুশান্ত বর্মণ তাঁকে নিয়েই প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত করছেন এজন্য তাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ‘তীব্র কুড়িগ্রাম’ সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে সর্বোত্তম সোপানে পৌঁছুক এই শুভ প্রত্যাশা করছি।)

পরিশেষে ছোট্ট একটি কবিতা:

আগুন

জ্ঞানী রেখে যায় জ্ঞান
গুণী রেখে যায় গুণ
জ্ঞান ও গুণ মিলে জ্বলুক
আঁধার তাড়ানো প্রতিবার আগুন!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মন্তব্য করার আগে আর একবার চিন্তা করুন, যা বলতে চান তা যথার্থ কি?